ختم الله على قلوبهم وعلى سمعهم وعلى ابصارهم غشاوة الخـ

Saturday, December 13, 2014

কন্যা সন্তানের অংশদানে অবহেলা করা অন্যায়

কন্যা সন্তানের অংশদানে অবহেলা করা অন্যায়
উত্তরাধিকার সম্পদের ব্যাপারে আমাদের সমাজে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশী অবহেলার শিকার, তা হলো কন্যা সন্তানের অংশদান। কোরআনুল কারীমে কন্যা সন্তানের অংশ দেওয়ার ব্যাপারে এতবেশী গুরাত্বারোপ করেছে যে,
১. একই মাতা-পিতার ঔরসে জন্ম হওয়া ছেলে-মেয়ের মধ্যে কোরআনে শুধু মেয়ের অংশই নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কোরআনে কোথাও ছেলের কোন অংশের উল্লেখ হয় নি।
২. এবং কন্যাদের অংশকে আসল ভিত্তি সাব্যস্ত করেছে এবং সে অনুপাতে পুত্রদের অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, “একপুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমপরিমাণ”( সূরা নিছা আয়াত নং১১)। একথা বলা হয় নি দুই কন্যার অংশ এক পুত্রের অংশের সমপরিমাণ।কোরআনের মত একমাত্র শ্রেষ্ঠ গ্রন্থে নারীকে মাপকাঠী নির্ধারণ করা নি:সন্দেহে তার জন্য মহাসম্মান ও মর্যাদার বিষয়।
৩. হযরত আবু হুরাইরা (রাযি.) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-“ আমি তোমাদেরকে বিশেষভাবে দু’ধরনের অসহায়ের মাল থেকে বেঁচে থাকার ব্যাপারে হুশিয়ার করছি। একজন নারী,অপরজন ইয়াতীম। (তাফসীরে ইবনে কাসীর২/২৪৮)
আর একথা স্পষ্ট যে, কোন ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করলে তার সম্পদের প্রত্যেক অংশে সকল ওয়ারিসদের হক সম্পৃক্ত হয়ে যায়।( অনেক ক্ষেত্রে ঘরের আছবাব পত্র মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদের মধ্যে শামিল করা হয় না। তসবীহ,জায়নামাজ,জল চৌকি ইত্যাদি যার যার পছন্দমত একেকটা ভাগ করে নিয়ে নেয় অথচ এগুলোও উত্তরাধিকারে শামিল করা জরুরী) মৃত ব্যাক্তির অপ্রাপ্ত বয়স্ক যদি কোনো সন্তান থাকে,তাদের হকও পরিত্যক্ত সম্পত্তির সাথে সম্পৃক্ত থাকে। তাদেরকে অংশ না দেয়া দ্বিগুণ গোনাহ। এক শরীয়ত সম্মত ওয়ারিসদের অংশ আত্মসাৎ করার দ্বিতীয় গুনাহ ইয়াতীমের সম্পত্তি হজম করে ফেলার । কেউ কেউ আবার কন্যাদের অংশ না দেয়ার জন্য বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি পেশ করে থাকে যে,তাদের বিয়ের সময় তো গহনা ও যৌতুক বাবদ মোটা অংক ব্যয় করা হয়েছে। এ কারণে তারা এখন পৈত্রিক সম্পদ দাবী করতে পারে না। মূলত এ যুক্তিটি সহঅবস্থানকারী হিন্দুদের থেকে সংক্রমিত হয়েছে। জীবদ্দশায় পিতা সন্তানের জন্য যাই ব্যয় করে থাকে , তাই তাদের প্রাপ্য মনে করা হয়। ইসলামে এধরনের খোঁড়া যুক্তির কোন অবকাশ নেই।
অনেকে আবার এযুক্তি পেশ করে যে, মেয়েরা যেহেতু স্বামীর বাড়ীতে চলে যায় এবং তার খরচাদী স্বামীই বহন করে থাকে,তাই তার সম্পদের তেমন কোন প্রয়োজন নেই। পক্ষান্তরে পিতার মৃত্যুর সময় ছেলে-মেয়ে উভয়ই বিবাহিত হলে ছেলেকে ক. নিজের পরিবার দেখতে হয়। খ. বোন অংশ নিয়ে নিলেও বোনকে ভাইয়ের আদর, পিত্রালয়ের আদর দিতে হয়। গ. ভগ্নিপতিকে শ্বশুর বাড়ির আদর দিতে হয়। ঘ. ভাগ্না-ভাগ্নিদেরকে মামা ও মামা বাড়ির আদর, নানার আদর দিতে হয়। ঙ. তাদের ও নিজেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয় সহযোগিতা করতে হয়। চ. বোনের স্বামী-পক্ষের আত্মীয়বর্গকে সর্বদা আদর-আপ্যায়নে মূল্যায়ন করতে হয়। আর এসবে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়।
শরীয়তের দৃষ্টিতে এসমস্ত যুক্তি অগ্রহণযোগ্য। বোনদের খোঁজ খবর নেয়া,তারা আসলে মেহমানদারী করা,তাদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা,এসব ভাই বেরাদারের নৈতিক দায়িত্ব। এর সাথে পৈত্রিক সম্পত্তির কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পদের স্বার্থে তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখা আত্মমর্যাদারও প্রশ্নও বটে। আত্মীয়তার সম্পর্ক সুরক্ষা তো তখন বুঝে আসবে,যখন সম্পদ নিয়ে যাওয়ার পরও তা বহাল থাকবে।
মোটকথা, কন্যা সন্তানের হিস্যা বিভিন্ন বাহানায় না দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কেউ ন্যায্য অধিকার চাইলে সমাজে তাকে ভৎসনা করা হয়। কোথাও তাদের হিস্যা দেয়া হলেও পূর্ণ দেয়া হয় না। কোথাও ভিটে বাড়ীর অংশ তাদেরকে দেয়া হয় না। অনেককে স্পষ্টও বলতে শোনা যায় যে, ভাই চাই না সম্পদ চাই । অর্থাৎ সম্পদ নিলে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক থাকবে না। তোমার দুঃখ-দুর্দশায় আমরা কোন সহযোগিতা করবো না। এমনিভাবে আমাদের সমাজে কন্যাদের সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়। বলাবাহুল্য,এটাই ছিল জাহেলী যুগের প্রথা,ইসলাম যার মুলৎপাটন করেছে।
মুফতী হাবীবুল্লাহ

1 মন্তব্য(গুলি):