ختم الله على قلوبهم وعلى سمعهم وعلى ابصارهم غشاوة الخـ

Friday, December 12, 2014

কওমী মাদরাসা কি ও কেন?

কওমী মাদরাসা কি ও কেন
এই ধরায় যুগে যুগে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সে গুলোর মাঝে অন্যতম ও সর্বোত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ক্বওমী মাদরাসা যার নির্মাতা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহান আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত মানবতার অগ্রদূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম।
দ্বীন ইসলাম শিক্ষার সূচনা, মক্কার ছাফা পাহাড় এর অদূরে দ্বীনি শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র প্রথম মাদরাসা, মদীনার মসজিদে নববীতে আহলে সুফফা দ্বিতীয় মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয় তার হাতে। দ্বীনি জ্ঞানে পরিপূর্ণ প্রখ্যাত ছাহাবায়ে কেরাম ছিলেন এই মাদরাসারই ফসল। যার অমীয় সূধা পান করে তৃপ্ত হয়েছেন, ইবনে আব্বাছ (রা.) ইবনে মাসউদ (রা.) আবূ হুরাইরা (রা.)। সৃষ্টি হয়েছেন ইমাম মালেক রহ, ইমাম আবু হানীফা রহ,ইমাম শাফেয়ী রহ, ইমাম আহমদ রহ প্রমুখ আইম্মায়ে কেরাম। যে কারখানা থেকে তৈরি হয়েছেন ইবনে সিনা, ইমাম গাজালীর মত দার্শনিক ও আলেমে দ্বীন ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত । তারা এক দিকে যেমন তাঁদের সুমহান চারিত্রিক মাধুর্যতা দিয়ে ইসলামের সৌন্দর্য সকলের নিকট ফুটিয়ে তোলে দ্বীন ইসলামের দিকে আহবানের মাধ্যমে ইহার প্রচার প্রসারের কাজ আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। অপর দিকে সর্ব প্রকার ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা এবং বাতিলের মুখোশ উম্মোচন করার জন্য সর্বদা তারা ছিলেন সজাগ-সচেতন ও নিবেদিত প্রাণ। ইসলামের পতাকা সমুন্নত রাখার জন্য তারা জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করে গিয়েছেন। দারুল উলূম দেওবন্দ ও কওমী মাদরাসা মূলত ঃ সে ধারারই উত্তরাধীকারী।
এই মাদরাসার পরিচয় দিতে গিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দের সম্মানিত প্রাক্তন মুহতামিম হাকীমুল ইসলাম ক¦ারী তৈয়্যব সাহেব রহ. বলেন, এ প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধর্মীয় দিক থেকে মুসলমান, আক্বীদা গত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত, মাযহাবের দিক থেকে হানাফী, মাশরাবের দিক থেকে সূফী, দর্শনের দিক থেকে আশআরী ও মাতুরিদী, তরীকার দিক থেকে চিশতী ও নকশবন্দী, চিন্তা ধারার দিক থেকে ওয়ালী উল্লাহী, মূলনীতির দিক থেকে কাসেমী,ফুরুআতের দিক থেকে রশীদী, সামগ্রীক দিক থেকে মাহমুদী, নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দী। বস্তুতঃ এটাই কওমী মাদরাসার পূর্ণাঙ্গ পরিচয়।
আর এটা কোন নতুন চিন্তা ধারা বা মতবাদের নাম নয়। বরং সাহাবায়ে কেরামেরই মত ও পথ অনুস্বরণ ও সে পথে চলার শিক্ষা প্রাণ কেন্দ্রের নামই কওমী মাদরাসা।
কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্বওমী মাদরাসা?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম এর যুগ থেকে নিয়ে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী,তাবে তাবেয়ীনের যুগ পর্যন্ত ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য ইয়াহুদী খৃষ্টানরা হাজার চক্রান্তের জাল পাতে।
দেখতে দেখতে তারা পরবর্তী যুগে তাদের হীন মিশনের কিছু সফলতা লাভ করে। ভাসকো দামাগার নেতৃত্বে তৎকালীন বিশে^র সবচেয়ে সমৃদ্ধ নগরী বাংলা পাক ভারত উপমহাদেশের পথ আবিস্কার করে এ দেশের রাজন্যবর্গের খিয়ালীপনার সুযোগে ইয়াহুদী খৃষ্টানরা বিভিন্ন স্থানে কুটির স্থাপন করে এবং ছলে বলে কলে কৌশলে নারী ও বিশ^াসঘাতকতার যোগ সাজশে তারা এ উপমহাদেশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের অধীনে নিতে থাকে।
শুধু তাই নয় একে একে উপমহাদেশের সমস্ত রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের দখলে নিয়ে যায় এবং নিজেদের মনগড়া পদ্ধতিতে দেশ চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে এদেশের মানুষের মাঝে বিরাজমান ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন ও সভ্যতায় মারাতœক ধ্বংস নেমে আসে।
তবে মুসলমানগণ তাঁদের বর্বর শাসন ক্ষমতা বেশি দিন মেনে নিতে পারেনি। তখন ওলামায়ে কেরাম নববী সুন্নাতের আলোকে ইসলামের সামাজিক, রাজনৈতিক সকল বিধি-বিধানকে বিশ্লেষণ করে ইসলামের রুপ রেখা ও তাগুতি শক্তিকে রুখবার জন্য এক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং আজাদী আন্দোলনের ডাক দেন। তবে এ দেশীয় কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্রে সেই আন্দোলন ব্যর্থ হয়। আর নেমে আসে নেতৃত্বদানকারীদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও নিপীড়নের স্ট্রিম রুলার। হাজারো মানুষ কালপানীর নি:সহ অত্যাচারে শিকার হন। চট্টগাম থেকে খায়বার পর্যন্ত গ্রান্ড ট্রাংক রুডের দু’পাশের একটি বৃক্ষ শাখাও এমন ছিলনা যাতে উলামায়ে কেরাম বা সাধারণ মুসলমানের লাশ ঝুলেনি। ফলে নেতৃত্বের জন্য সিপাহসালার ছিল অনেক অভাব। তখন উলামায়ে কেরাম এলমে দ্বীন, এলমী নববীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ও তা মানব সন্তানের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং উপমহাদেশকে ইয়াহুদীদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি করার জন্য প্রত্যয়ী আতœত্যাগী সিপাহসালার তৈরির মহান লক্ষ্যে এক প্রতিষ্ঠান তৈরির অনুভব করেন। এ কঠিন মুহুর্তে রফিউদ্দীন রহ.এর স্বপ্ন যুগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামের নির্দেশিত স্থানে কাসেম নানুতবী রহ.এর নেতৃত্বে ১৮৬৬ খৃষ্টাব্দের ৩০ শে মে মোতাবেক ১৫ ই মুর্হারম ১২৮৩ হিজরীতে ভারতের সাহরানপুর জেলার দেওবন্দ নামক এলাকায় ঐতিহাসিক ছাত্তা মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি ডালিম গাছের ছায়ায় প্রচলিত ধারার সর্ব প্রথম কওমী মাদরাসা দারুল উলূম দেওবন্দের গোড়া পত্তন করা হয়। সে চিন্তা ধারা নিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের কওমী মাদরাসাগুলো। যা কেড়ে নিয়েছে মানুষের অন্তর, গেথে গেছে হৃদয়ের গহীনে, স্থান করে নিয়েছে মানুষের হৃদয় আসনে। মানুষের তাহজীব তামাদ্দুনে তার অবদান অবর্ণনীয়।

0 মন্তব্য(গুলি):

Post a Comment